প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি স্থলবন্দরগুলো খুলে দিলেও বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ বন্দর দিয়ে ট্রাক প্রবেশ করতে দিচ্ছিল না ভারত। বলা হচ্ছিল, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বাধায় বাংলাদেশি পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো আটকে দেয়া হচ্ছিল। সেই সমস্যাও দূর হয়েছে। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্রটির সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন করে রেলযোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে তাদের পণ্য পরিবহনের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। মঙ্গলবার ‘পরীক্ষামূলক’ ভারতীয় পণ্যের প্রথম চালানটি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি সেজুঁতি’। এখন নিয়ম অনুযায়ী, বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য চার্জ আদায় করবে। এর বাইরে রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক, সড়ক ব্যবহার ও নিরাপত্তার জন্য যেসব মাশুল নির্ধারিত আছে, সেগুলোও আদায় করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো জাহাজের মালামাল কুমিল্লার বিবিরবাজার অথবা আখাউড়ার সড়কপথ দিয়ে ভারতের আগরতলায় যাবে। ট্রায়াল রানে কী কী সমস্যা হয় সেগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের পর নিয়মিত রুট চালু হবে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আরও বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের এই উদ্যোগসহ নতুন করে রেলপথের ব্যবহার দু’দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশ ও ভারত, উভয় দেশই সংক্রমণ রোধে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে। ফলে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সেই ক্ষতির পরিমাণ কমাতে উভয় দেশ রেলপথে পণ্য পরিবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে রেলে পণ্যপরিবহন শুরু হয়েছে। তবে পরিমাণ আরও বাড়াতে কাজ করছে উভয় সরকার।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কয়েকদিন বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হতে সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় এখন আর সেই সমস্যা নেই। আমি নিজেই ভারত-বাংলাদেশ, উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন আর আমাদের কারোর-ই কোনো সমস্যা নেই।
তিনি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে এখন আমরা রেলপথের মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রফতানির দিকে জোর দিচ্ছি। রেলে পণ্য পরিবহনে খরচ ও ঝামেলা দুটোই কমে যাবে। ইতোমধ্যে ট্রেনে পণ্য আমদানি শুরু হয়েছে। রেলে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রক্রিয়াটা খুব জোরেশোরে চলছে।
ভারতের সঙ্গে রেলপথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের সক্ষমতা এবং কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কি-না, প্রশ্ন রাখা হয় রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামানের কাছে। তিনি বলেন, করোনার প্রথমদিকে ভারতে থেকে মালবাহী ট্রেনে পণ্য আসতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু এখন এ ধরনের ট্রেন আসার সংখ্যা বেড়েছে। বেনাপোল, দর্শনাসহ অন্যান্য রুট দিয়ে প্রতিদিন চার-পাঁচটা করে মালবাহী ট্রেন আসছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আরও অন্যান্য সাইডে আমরা ক্যাপাসিটি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। মালবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর সক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা সংখ্যা বাড়াতে পারব।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘ভারত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ। তাই আমরা যখন সেখান থেকে কোনো পণ্য নিয়ে আসতে চায় সেটা খুব দ্রুত আনতে পারি। সেক্ষেত্রে ট্রেন সবসময় নিরাপদ। তাই আমরা যারা ভারত থেকে পণ্য আমদানি করছি বা রফতানিও করব, তাদের জন্য ট্রেনের সংখ্যা যত বাড়বে ততই ভালো। ট্রেনের মাধ্যমে পণ্য আমাদানি-রফতানি করলে একদিকে নিরাপত্তা বেশি থাকে অন্যদিকে খরচও কম পড়ে।’
এদিকে, রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে পণ্য পরিবহনে রেলপথের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ইতোমধ্যে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে রেলের পার্সেল ভ্যানের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে এসব পার্সেল সার্ভিস ব্যবহার করা হচ্ছে।