বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেশিরভাগ যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে

প্রকাশঃ

বাংলাদেশের তৈরি বেশিরভাগ পোশাক যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। বাংলাদেশ থেকে অন্তত ২০টির বেশি দেশে পোশাক রফতানি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তৈরি করা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে মার্কিন মুলুকে পোশাক পণ্য রফতানি থেকে এসেছে ২৩১ কোটি ৯২ লাখ ডলার। পোশাক রফতানিতে শীর্ষ তিনে থাকা যুক্তরাজ্যের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি এই অঙ্ক। একই সময়ে যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে পাওয়া গেছে ১১০ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।

জানা যায়, তিন মাসে বাংলাদেশ পোশাক রফতানি করে পেয়েছে ১ হাজার ৮৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে শীর্ষ তিন দেশ আমেরিকা, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের বাজারে পোশাক রফতানি থেকে এসেছে ৫২৪ কোটি ডলার। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পোশাক রফতানি করে পাওয়া গেছে বাকি ৫৫৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে শীর্ষ দুইয়ে থাকা জার্মানির বাজারে পোশাক রফতানি হয়েছে ১৮৩ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, শীর্ষ চার থেকে শীর্ষ ৯-এ থাকা স্পেন, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা ও বেলজিয়ামে তৈরি পোশাক রফতানি করে ২৬৭ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিটওয়্যার গার্মেন্টস পণ্যের চেয়ে ওভেন গার্মেন্টস পণ্যের চাহিদা বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া ২৩১ কোটি ডলারের মধ্যে রয়েছে ১৫১ কোটি ১০ লাখ ডলারের ওভেন গার্মেন্টস পণ্য। আর নিটওয়্যার গার্মেন্টস পণ্য রফতানি হয়েছে ৮০ কোটি ডলারের।

জার্মানিতে অবশ্য নিটওয়্যার পণ্যের চাহিদা বেশি। দেশটিতে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের নিটওয়্যার গার্মেন্টস পণ্য রফতানি হয়েছে। বাকি ৭২৯ কোটি ডলার রফতানি হয়েছে ওভেন গার্মেন্টস পণ্য।

এছাড়া বেলজিয়াম, ইতালি ও ফ্রান্সে ওভেন গার্মেন্টস পণ্যের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি নিটওয়্যার পণ্য রফতানি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, দেশে তৈরি পোশাক থেকে মোট রফতানির ৭৯ দশমিক ২৭ শতাংশ আয় হয়। এছাড়া অন্যান্য পণ্য রফতানি করে আয় হয় ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

এদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) অপ্রচলিত বাজারে ৩০৬ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ; যা আগের বছরে একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। সাধারণত ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে প্রচলিত বাজার বা পুরনো বাজার হিসেবে ধরা হয়। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য ২৫টি দেশ এবং অন্যান্য বাজারকে অপ্রচলিত বা নতুন বাজার ভাবা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা পোশাকে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছি। এজন্য নতুন ধরনের পোশাক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক নতুন বাজারে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’

বিজিএমইএ সভাপতি উল্লেখ করেন, সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো পোশাক রফতানির প্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এর বাইরে চিলি, চীন, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, মেক্সিকো, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়া পোশাক রফতানির নতুন বাজার হিসেবে ধরা হচ্ছে। এসব দেশে পোশাক রফতানি বাড়ছে।

ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে জাপানের বাজারে ৫২ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে; গত বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এবার জাপানে পোশাক রফতানি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। একই সময় বাংলাদেশ থেকে ৩৪ কোটি ১২ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছে রাশিয়া। গত অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার রাশিয়ায় রফতানি বেড়েছে ৩৮ দশমিক ১০ শতাংশ।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলিতে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি হয়েছে ৮ কোটি ১৭ লাখ ডলারের। এর আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। একবছরের ব্যবধানে সেখানে রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। একই সময়ে ভারতের বাজারে পোশাক রফতানি থেকে এসেছে ৩৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে ভারতে পোশাক রফতানি হয়েছিল ২৩ কোটি ১৫ লাখ ডলারের। অর্থাৎ একবছরের ব্যবধানে ভারতে পোশাক রফতানি থেকে আয় বেড়েছে ৫৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

এছাড়া একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রফতানি হয়েছে ৩৯ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফলে এক বছরের ব্যবধানে অপ্রচলিত এই বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।

এদিকে, মেক্সিকোতে উল্লিখিত সময়ে পোশাক রফতানি হয়েছে ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের; গত বছর একই সময়ে দেশটিতে এর পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। একবছরের ব্যবধানে দেশটিতে রফতানি আয় বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

ইপিবি’র তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বরে পণ্য রফতানি করে ৪৯১ কোটি ডলার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে বাংলাদেশ, যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আসা রফতানি আয়ের চেয়ে ৪৮ শতাংশ বেশি। গত নভেম্বরে রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৪০৪ কোটি ডলার। সেই হিসাবে আগের মাসের তুলনায় ডিসেম্বরে রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ।

আরও পড়ুন : পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামকে টপকিয়ে রপ্তানি বেড়েছে ৪৭২ কোটি ডলার

ইপিবি’র তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে আসা রফতানি আয়ের তুলনায় ৫৪৭ কোটি ডলার বা ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাক ও বিশেষত নিটওয়্যার পণ্য রফতানি বেড়েছে। ইপিবি’র তথ্য মতে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের রফতানির তুলনায় ২০২১ সালের একই মাসে পোশাক রফতানি ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৮ শতাংশ। ২০২১-এর ডিসেম্বরে ৪০৪ কোটি ডলার সমমূল্যের পোশাক রফতানি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পোশাক রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরে একই সময়ের পোশাক রফতানির চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ