বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আরও কমলো। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) এর দাম কমে গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। চীনে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত লকডাউন, বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোতে সুদের হার বৃদ্ধি এবং ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা জেঁকে বসায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে বলে মনে করছেন বিশ্লষকেরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে অপরিশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ৩৫ মার্কিন ডলার বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৯১ দশমিক ৪৮ ডলার ছিল। এই সেশনে লেনদেনের একপর্যায়ে তেলের দাম নেমে গিয়েছিল ৯১ দশমিক ৩৫ ডলারে, যা গত ১৮ ফেব্রুয়ারির পর থেকে সর্বনিম্ন। এর আগে, গত মঙ্গলবার ব্রেন্টের দাম কমেছিল প্রায় তিন শতাংশ।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের তেলের বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ১ দশমিক ৫৫ ডলার বা ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৮৫ দশমিক ৩৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ সেশনে লেনদেনের একপর্যায়ে ডব্লিউটিআইয়ের দাম নেমে গিয়েছিল ৮৫ দশমিক ১৭ ডলারে, যা গত ২৬ জানুয়ারির পর থেকে সর্বনিম্ন।
এর আগে, গত সোমবার রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদক দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস আগামী অক্টোবর থেকে দৈনিক এক লাখ ব্যারেল তেল কম উৎপাদনের ঘোষণা দেয়। তাদের এ সিদ্ধান্তের পরপরই বিশ্ববাজারে বেড়ে যায় তেলের দাম।
ফোরেক্স কোম্পানি ওএনএডিএ’র জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মোয়া বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সামনে ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তকে ম্লান করা এতটা কঠিন ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো কিছু সার্ভিস ডেটা পাওয়া সত্ত্বেও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মোটেও ভালো দেখাচ্ছে না। এটি অপরিশোধিত তেলের দামের জন্য সমস্যা।
এর পাশাপাশি মার্কিন ডলারের শক্তিবৃদ্ধি, সুদের হার বৃদ্ধি, চীনের নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি প্রভৃতি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওপর চাপ তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন সিএমসি মার্কেটসের বিশ্লেষক টিনা টেং। তার কথায়, তেলের ফিউচার মার্কেটগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এ মূল্য নির্ধারণ করছে। একটি দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ বেকারত্ব হার ও স্থবির চাহিদার পাশপাশি ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকাকে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ বলা হয়।
চীনের কঠোর কোভিড-নীতির কারণে সম্প্রতি চেংদুসহ একাধিক শহর লকডাউন করা হয়েছে। এর ফলে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা দেশটিতে তেলের চাহিদা কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এছাড়া, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশে দেশে আরও সুদের হার বৃদ্ধির দিকে সতর্ক নজর রেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। আগামী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার আরও বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিপরীতে ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যমানে পৌঁছেছে মার্কিন ডলার। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের ডলারের বিপরীতেও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা।