বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দেশে এখন শতাধিক। এর মধ্যে অনুমোদন থাকার পরও নানান সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না অনেকে। যেগুলো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তার সবগুলোর মান সন্তোষজনক নয়। নানান অনিয়মে কয়েকটি আবার বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতেই হিমশিম খাচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য চলছে দৌড়ঝাঁপ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে ১০৭টি আবেদন। ১৫টি অনুমোদনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। অপেক্ষা প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির। জমা পড়া আবেদনের বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগ নেতাদের।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৬২টি। মোট চালু রয়েছে ৯৭টি। অনুমোদন নেওয়ার পরও নানান জটিলতায় কার্যক্রম শুরু হয়নি ১০টির। জনবল সংকটের কারণে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে ইউজিসি। অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় আইন না মানলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১০৭টি আবেদন জমা হয়ে আছে। যেসব জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেসব জায়গার জন্যও নতুন করে পড়েছে আবেদন। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেয়েছেন, এমন উদ্যোক্তাও নতুন করে ভিন্ন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছেন। এসব আবেদনের মধ্যে ৩০টির পরিদর্শনকাজ শেষ করে ইউজিসি থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও বাইরের বিভিন্ন জেলায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আরও ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়।
জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর অধীনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনের জন্য উদ্যোক্তাদের আবেদন জমা দিতে হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। আবেদনের ভিত্তিতে ইউজিসি পরিদর্শন রিপোর্ট জমা দিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, ‘এ পর্যন্ত সারাদেশে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকে এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অনেকে আবার আইন অমান্য করে একাডেমিক-প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষক সংকট রয়েছে। অনেকে আবার সনদ বাণিজ্য ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে চাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাড়লেও ইউজিসিতে জনবল বাড়ানো হয়নি বলে অনেক অনিয়ম ধরা সম্ভব হচ্ছে না। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের চেয়ে যারা অনুমোদন পেয়েছে তাদের সঠিক পথে আনা বেশি জরুরি।’
ইউজিসি থেকে জানা যায়, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন এরশাদ ময়মনসিংহে ‘রওশন এরশাদ বিশ্ববিদ্যালয়’ অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ পটুয়াখালীতে ‘সাউথ রিজিয়ন ইউনিভার্সিটি’ ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের স্ত্রী ফৌজিয়া আলম কুষ্টিয়ায় ‘লালন বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে আবেদন করেছেন।
সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির নেতা এইচ এম গোলাম রেজার আবেদন রয়েছে ‘সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’ স্থাপনের। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শামসুল আলম ভুঁইয়া ‘অ্যাপোলো ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামে চাঁদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ে আবেদন করেছেন।
উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াসমিন আরা লেখা ‘ইউনিভার্সিটি অব বগুড়া ট্রাস্ট’ নামে আবেদন করেছেন বগুড়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের।
আহমদ আল কবির নামে এক উদ্যোক্তা আবেদন করেছেন আর টি এম আল কবির ‘টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়’, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি মুন্সিগঞ্জে ‘ইউনিভার্সিটি অব অতীশ দীপঙ্কর’, ব্যবসায়ী মোস্তফা আজাদ চৌধুরী ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে রংপুরে, আবু নোমান হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি ‘ইউনিভার্সিটি অব মডার্ন টেকনোলজি’ নামে ঢাকায়, রংপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল আলম ‘আল আমিন নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি’ নামে রংপুরে, আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মাহমুদ চৌধুরী ‘ইন্টারন্যাশনাল ওমেন ইউনিভার্সিটি নামে চট্টগ্রামে, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সংঘ ‘আন্তর্জাতিক পণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে, অ্যাডভোকেট আরমান আলী ‘সোনার বাংলা ইউনিভার্সিটি’ নামে রাজশাহীতে, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ‘চিটাগাং মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি’ স্থাপনের জন্য আবেদন করেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) আবু ইউসুফ মিয়া বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইউজিসি থেকে যে কয়টি পরিদর্শন প্রতিবেদন আমাদের কাছে এসেছে আমরা তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে অনুমোদনের জন্য সম্মতি এলে তাদের অনুমোদন দেওয়া হবে। এ সংখ্যা ১৫ থেকে ২০টির মতো হতে পারে।