রাবি ক্যাম্পাসে নতুন ক্লাব বা সংগঠন খোলা যাবে না। ছাত্রছাত্রীরা প্রক্টরের অনুমতি ছাড়া করতে পারবেন না কোনো সভা-সমাবেশ। শুধু তাই নয়, ক্যাম্পাসের ভেতরে বাদ্যযন্ত্রও বাজানো যাবে না। কাউকে আপ্যায়ন করাতেও লাগবে প্রক্টরের অনুমতি।
বাইরের মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের মেস পরিবর্তনে অনুমতি নিতে হবে হল প্রাধ্যক্ষের। প্রতিদিন রাতের বেলা রোল ডেকে হাজিরা নেওয়া হবে আবাসিক শিক্ষার্থীদের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এমন ১৭টি নির্দেশনা মেনে চলতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দফতর। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে এমন নিয়ম উল্লিখিত আছে’—উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক লিয়াকত আলী সই করা নির্দেশনাগুলো এরই মধ্যে সব আবাসিক হল এবং একাডেমিক ভবনগুলোতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞপ্তিকে ‘ভীতি প্রদর্শন করে নবীন শিক্ষার্থীদের চাপে রাখার হাতিয়ার’ বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মিটুন চন্দ্র মোহন্ত।
তিনি বলেন, ‘অধ্যাদেশ কোট করা একপাক্ষিক নোটিশটি দেখে নবীন শিক্ষার্থীরা প্রথম থেকেই ভীতিকর অবস্থায় থাকবে। তাদের ওপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধেও তারা কথা বলতে ভয় পাবেন। বিষয়টা একরকম মানসিক চাপের ভেতরে রেখে জিম্মি করার মতো অবস্থায় চলে গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু পরিবর্তন-পরিমার্জন করা প্রয়োজন।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) আন্দোলন মঞ্চ নেতা আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো চুরি-দুর্নীতি অথবা অনিয়ম করলেও শিক্ষার্থীরা যেন কোনো প্রশ্ন করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতেই এই নোটিশ।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও একাধিক হলের নারী শিক্ষার্থীরা সান্ধ্যআইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এটাও প্রশাসনের কাছে একটা ভয়ের কারণ। নারীরা যদি মুক্ত হয়, প্রশ্ন করা শেখে তাহলে হয়তো অনেক বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে, যেটার জন্য কর্তৃপক্ষ মোটেও প্রস্তুত নয়। তাই যে কোনো উপায়ে এদেরকে ঘরবন্দি করে রাখতে চায় প্রশাসন।’
এদিকে অধ্যাদেশের উদ্ধৃতি দিয়ে নোটিশ দেওয়া হলেও এসব নিয়মকানুনের উল্লেখ আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে এমন নিয়ম উল্লিখিত আছে’—বিজ্ঞপ্তিতে এমন কথা বলা হলেও ১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে এসব বিষয়ে উল্লেখ নেই।
বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লিয়াকত আলী বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থীই বলে আমার কোনো নিয়মকানুন নাই, বিধিবিধান নাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু বাধ্যবাধকতা আছে, এসব তাদের জানা থাকা দরকার। তবে আমরা পালন করি না করি সেসব ভিন্ন বিষয়। বিজ্ঞপ্তিতে আমার নিজের লেখা কোনো কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি শুধু শিক্ষার্থীদের জানার জন্য দেওয়া হয়েছে যে এরকম বিধিবিধান আছে। যেসব স্বাভাবিক নিয়মকানুনে আমরা অভ্যস্ত সেগুলোর জন্য এই মুহূর্তে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।’