জানুয়ারি মাসের জন্য এলপিজির দাম ৫০ টাকা কমিয়ে ১ হাজার ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। একই সঙ্গে প্রতিটি এলপিজি বিক্রি করা দোকানে নির্ধারিত মূল্যতালিকা প্রদর্শনেরও নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কিন্তু খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে নির্ধারিত দাম ও মূল্য প্রদর্শনের নির্দেশনা দুটোই মানা হচ্ছে না।
এক সপ্তাহজুড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি হোলসেলার ও খুচরা বিক্রেতার দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। হোলসেল পর্যায়ে বিইআরসি নির্ধারিত দাম রাখা হলেও আরও ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখছেন খুচরা বিক্রেতারা। অন্যদিকে মূল্য প্রদর্শনের নির্দেশনা মানছেন না খুচরা বিক্রেতারা।
রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার বাজার, অলিগলিতে বেশকিছু দোকানে ১২ কেজির এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম রাখা হচ্ছে ১ হাজার ২৩০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো দোকানে ১ হাজার ২৭০ টাকাও মূল্য দাবি করা হচ্ছে। অথচ জানুয়ারি মাসের শুরুতেই ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম ১ হাজার ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি।
ক্রেতাবেশে বাড্ডার হোসেন মার্কেটের পেছনের গলিতে মেসার্স রিনা ফাতেমা মেটাল নামে এক খুচরা বিক্রেতার দোকানে গিয়ে ১২ কেজির এলপিজির দাম জানতে চাইলে ওই দোকানের মালিক ১ হাজার ২৫০ টাকা দাবি করেন। তার দোকানে একাধিক কোম্পানির এলপিজির ১০ থেকে ১৫টি সিলিন্ডার রয়েছে। ‘দাম না কমানো হয়েছে’ এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সরকার দাম কমাইছে, আমিও তো কমাইছি। আগে তো ১ হাজার ৩০০ টাকা ছিল। ৫০ টাকা কমাইয়া এখন আড়াইশ রাখি।’
সরকার তো ১ হাজার ১৭৮ টাকা দাম নির্ধারণ করেছে, আপনি কেন এত বেশি রাখছেন প্রশ্ন করলে ওই দোকানদারের উত্তর, ‘আমার দোকান ভাড়া কি সরকার দেয়? আমার সব সার্ভিস সরকার দেয় নাকি?’ আপনার দোকানে এলপিজির মূল্যতালিকা কোথায়, প্রশ্ন করলে তার উত্তর, ‘তালিকার খবর জানি না’।
একাধিক খুচরা বিক্রেতার দাবি, তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ১৮০ টাকা করে দাম রাখেন হোলসেলাররা। সঙ্গে আছে গাড়ি ভাড়া। এজন্য তারাও দাম বেশি রাখেন।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন শাহজাদপুর সুবাস্তু টাওয়ারের বিপরীত পাশে রিদয় এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. শাবলু। বেশ কয়েকটি কোম্পানির হোলসেলার হিসেবে এলপিজি বিক্রি করেন তারা। দোকানটিতে গিয়ে দেখা যায়, ম্যানেজারের টেবিলের পাশেই গ্যাসের মূল্যতালিকা টাঙানো। সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছেন তারা।
আরও পড়ুন : ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত গ্যাসের চাপ কম থাকতে পারে
গ্যাসের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে দোকানের ম্যানেজার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কোম্পানি থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০ টাকার মধ্যেই পাই। ১১শ টাকায় পাইকারি বিক্রি করি। খুচরা কাস্টমার এলে সরকার নির্ধারিত ১ হাজার ১৭৮ টাকায় বিক্রি করি।’ গাড়ি ভাড়া দিয়ে নিতে হয় খুচরা বিক্রেতাদের এমন অভিযোগ তাকে জানালে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের গাড়ি দিয়ে বিনা চার্জে দিয়ে আসি।’ গ্যাসের সংকট আছে খুচরা বিক্রেতাদের এমন দাবির কথা জানালে তিনি বলেন, ‘কোনো সংকট নেই। এক সপ্তাহে সংকট দেখা দিলে তার পরের সপ্তাহেই গ্যাস ভরপুর থাকে। স্থায়ী কোনো সংকট নেই।’
গত বছর ডিসেম্বরে এলপিজির সর্বশেষ দাম ছিল ১ হাজার ২২৮ টাকা। এবছর জানুয়ারি মাসের জন্য ৫০ টাকা দাম কমিয়ে ১ হাজার ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। একই সঙ্গে দোকানগুলোতে সরকার নির্ধারিত বিক্রয়মূল্য টাঙিয়ে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।