বিগত বছরগুলোতে রাজধানীতে শীতের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কমই ছিল। কিন্তু এ বছর শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়াতে সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন শীত। কবে শেষ হবে শীত অনেকেই এখন সে কথা বলছেন। তবে যারা ভাবছেন জানুয়ারি শেষ হলেই শীত শেষ। তাদের জন্য মন খারাপের খবর দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এবারের শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় গতকাল এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
এ বছর শীত বেশি পড়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে দেশে দিন-রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম থাকা; বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম; মাঝরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত, কখনও আবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত থাকে দেশ; ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশের দিকে প্রায় ২০০ মিটারের একটি কুয়াশার স্তর থাকে। এতে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে আসতে পারছে না। ফলে ভূপৃষ্ঠ এবং এর সংলগ্ন বাতাসের উষ্ণতা বাড়তে পারেনি। এছাড়া ভারতের হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা অনেক কম। শীত মৌসুমে সাধারণত ওই সব এলাকা (উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক) থেকে বাংলাদেশমুখী বাতাসের গতি থাকে। সেটাও শীতল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মেঘমুক্ত আকাশ।
তিনি আরও বলেন, আগামী দু-এক দিন এই শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। দুই দিনের মধ্যে কুয়াশা কিছুটা কাটতে শুরু করবে। এতে রোদ বেড়ে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। কমতে থাকবে শীতও।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুপুরে দেশের কয়েকটি জেলায় কয়েক ঘণ্টার জন্য রোদের দেখা পাওয়া গেলেও গতকাল সূর্যের মুখ দেখা মেলেনি। সকাল থেকে দিনভর শীতের তীব্রতা ছিল, সন্ধ্যার পর হিমেল হাওয়ার সঙ্গে আরও জেঁকে বসে ঠাণ্ডা। পাঁচ দিন ধরে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ মৃদু থাকলেও দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এলে সেখানে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গাসহ ১৬ এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বাকি জেলাগুলোতে তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, এবার শীত মৌসুম ফেব্রুয়ারিজুড়েই থাকতে পারে। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে একটি ও ফেব্রুয়ারিতে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে শীতকালে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও শীত বেশি অনুভূত হওয়ার প্রধান কারণ হলো জলাভূমি, খালবিল, নদীনালার পরিমাণ কমে কংক্রিটের অবকাঠামো বেড়ে যাওয়া।