শীত মানেই ত্বক, চুল, হাত-পা আর ঠোঁটের অবস্থা দফারফা। সারা বছর অবহেলায় গেলেও শীতের সময়টাতে ত্বকের একটু বেশি যত্ন নিতেই হয়। কেননা এই সময় ত্বক ও চুল দুটোই রুক্ষ হয়ে যায়। শীতে গ্লোয়িং ত্বক ও ঝলমলে চুল পেতে বাড়তি যত্ন নেওয়ার কোন বিকল্প নাই।
রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন জানালেন, ঠোঁট ফাটলে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ। এরপর বাহ্যিকভাবে কিছু প্রয়োগের কথা আসে। সপ্তাহে এক দিন ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে পারেন ঘরোয়া প্যাকের সহায়তায়। আধা কাপ দুধের সর এবং দেড় টেবিল চামচ হলুদবাটার সঙ্গে পরিমাণমতো চালের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। মুখে ও শরীরে মালিশ করে ধুয়ে ফেলুন (৩০ মিনিটের বেশি মালিশ করবেন না। চাইলে শুধু মুখের জন্য কম পরিমাণেও তৈরি করতে পারেন)। গোড়ালি বেশি ফেটে গেলে ঘুমানোর আগে পুরু করে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে মোজা পরে নিতে হবে।
মুখের ত্বকের জন্য: শীতে টোনার কিংবা অ্যাস্ট্রেঞ্জেন্ট ব্যবহার না করাই ভালো। টোনার ও ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ টেবিল চামচ ভার্জিন নারকেল তেল, সিকি চা-চামচ কাঁচা হলুদগুঁড়া (চালনি দিয়ে চেলে নেওয়া) ও ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস ব্লেন্ড করে বা ফেটে নিন (কাঁটাচামচ বা বিটার দিয়ে)। ত্বক খুব শুষ্ক হলে, যোগ করুন ১ চা-চামচ ভ্যাসলিন। ছোট স্টিলের পাত্রে ভ্যাসলিন নিয়ে নিন। এবার পাত্রটি অপেক্ষাকৃত বড় গরম পানির পাত্রে রেখে দিন। গরম পানির তাপে ভ্যাসলিন গলে যাবে। ত্বকে মানিয়ে গেলে এই মিশ্রণ প্রয়োগ করা যাবে শীতজুড়েই। কাচের বয়ামে রাখতে পারেন।
ত্বক তৈলাক্ত প্রকৃতির হলে সপ্তাহে এক দিন ১ চা-চামচ কমলালেবুর রস, ১ টেবিল চামচ বেসন বা চন্দনগুঁড়া অথবা মুলতানি মাটি, ১ টেবিল চামচ গোলাপজল বা টক দই এবং সিকি চা-চামচ মধুর মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
রূপচর্চার উপকরণের কোনোটিতে অ্যালার্জি থাকলে তা মুখ বা শরীরে প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন। কোনোটি প্রয়োগ শুরুর আগে সামান্য পরিমাণে লাগিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন, প্রতিক্রিয়া হলে ঠান্ডা টক দই দিয়ে রাখুন খানিকক্ষণ।
চুলের জন্য : শ্যাম্পু করার আগে তেল মালিশ করুন (অন্তত ১০ মিনিট আগে হলেও)। মেথিগুঁড়া ১ চা-চামচের সঙ্গে নিন সমপরিমাণ আমলকীর গুঁড়া ও হরীতকীর গুঁড়া (প্রতিটি গুঁড়া চালনি দিয়ে চেলে নেওয়া)। ১ কাপ টক দই, ১টি ডিম ও ২ টেবিল চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে এই উপকরণগুলো দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। ১ ঘণ্টা পর লাগান মাথার ত্বক ও চুলে, সপ্তাহে এক দিন। লাগানোর পর সেলোফিন কাগজ বা শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে পারেন। ৩০ মিনিটের মধ্যে ধুয়ে ফেলুন।
প্যাকটি ব্লেন্ড করার আগে প্রয়োজন বুঝে আরও কিছু যোগ করে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন রাহিমা সুলতানা। যেমন চুল পড়ার সমস্যা থাকলে ২ টেবিল চামচ মেহেদিপাতাবাটা মিশিয়ে নিন। খুশকি থাকলে ১ চা-চামচ লেবুর রস নিন। রুক্ষ-শুষ্ক চুল হলে বা চুলে রাসায়নিক প্রয়োগ করা থাকলে আধা কাপ অ্যালোভেরার মণ্ড মিশিয়ে নেবেন মিশ্রণে।
আরও পড়ুন : এই শীতে হাত-পা গরম রাখার কিছু উপায়
এই সময় ব্যাগে সব সময় থাকুক ময়েশ্চারাইজার। ধুলা আর শুষ্কতা যতই থাক, যত্নে রাখুন আপনার ত্বককে। শীতের শুরু থেকেই ত্বক আর চুল যত্নে রাখলে শীত শেষে পাবেন ইতিবাচক ফলাফল।
পরিচ্ছন্ন ত্বক : সাবান বা বডি ওয়াশারের পরিবর্তে মালিশ ক্রিম ব্যবহার করুন। স্বাভাবিক ও শুষ্ক ত্বকের জন্য সমপরিমাণ মালিশ করার ক্রিম আর ভার্জিন নারকেল তেল মিশিয়ে নিতে পারেন। রোদে পোড়া ত্বকের জন্য যোগ করে নিন ২ ফোঁটা লেবুর রস। খুব শুষ্ক ত্বকের জন্যও ১-২ ফোঁটা লেবুর রস যোগ করতে হবে। স্বাভাবিক ও তৈলাক্ত ত্বকে ১ টেবিল চামচ দুধ, আধা টেবিল চামচ মধু ও ১-২ ফোঁটা লেবুর রসের মিশ্রণ দিয়ে পরিষ্কার করা যায়।
বাড়িতেই ম্যানিকিউর-পেডিকিউর : জারা’স বিউটি লাউঞ্জ অ্যান্ড ফিটনেস সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং রূপবিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমি জানালেন বাড়িতে প্রতি সপ্তাহে ম্যানিকিউর ও পেডিকিউর করা প্রয়োজন। হাত-পায়ের নখগুলো পছন্দের আকৃতিতে কেটে নখে ক্রিম লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর গরম পানিতে শ্যাম্পু, খানিকটা লবণ ও সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে হাত-পা ডুবিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। তোয়ালে দিয়ে হাত-পা মুছে নখে আবার ক্রিম দিয়ে কিছুক্ষণ মালিশ করুন। নখের গোড়ায় জমে থাকা ময়লা ও মৃত কোষ স্ক্রাব দিয়ে ঘষে তুলে ফেলতে হবে। এরপর মুলতানি মাটি, মধু এবং গোলাপজলের পেস্ট তৈরি করে হাত-পায়ে মেখে ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। হাত-পা মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এ ছাড়া ফেটে যাওয়া ত্বকে রোজ ময়েশ্চারাইজারের সঙ্গে যোগ করতে পারেন ভিটামিন ই ক্যাপসুল।