আজ পহেলা ফাল্গুন। আগুনরাঙা বসন্তের প্রথম দিন। বাঙালির জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে বসন্ত। প্রকৃতি আজ খুলে দেবে দখিন দুয়ার। সে দুয়ারে বইবে ফাগুনের হাওয়া। বসন্তের আগমনে কোকিল গাইবে গান। ভ্রমরও করবে খেলা। গাছে গাছে ছড়িয়ে পড়বে পলাশ আর শিমুলের মেলা। প্রকৃতি সাজবে নতুনরূপে। শীতের খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। মৃদু-মন্দ বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে, সত্যিই সে ঋতু রাজ বসন্ত।
হৃদয়ের ব্যাকুলতা নিয়ে এসেছে বসন্ত। কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে, হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে বনের কুসুমগুলি ঘিরে।
আকাশে মেলিয়া আঁখি তবুও ফুটেছে জবা, দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে, তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক।’ পুরো বাংলাই আজ যেন তাই। এতদিন ধরে যার অপেক্ষা, সেই বসন্ত আজ সমাগত। আজ যে পহেলা ফাগুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন।
এ বসন্ত শুধু শুধু উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন স্মৃতির কথাও মনে করিয়ে দেয়। ১৯৫২ সালের ৮ ফাল্গুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ারও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। এ উৎসব এখন সব বাঙালির উৎসব। এ উৎসবটির একটি ঐতিহ্যময় ইতিহাস আছে।
মোগল সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম ও উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। তাই বসন্ত উৎসব শুধু একটা উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য।
আজ তরুণ-তরুণীরা নামবে পথে প্রান্তরে। আর এ রাজধানী ঢাকার বুকে বাসন্তী সাজে তারা ঘুরে বেড়াবে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর, চারুকলা আর টিএসসিতে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিণত হবে মানুষের বাসন্তী রঙের প্রাঙ্গণে। রমনা পার্ক, জাতীয় সংসদ, চন্দ্রিমা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণে ঘুরতে বেড়াবে রাজধানীবাসী।
এবারও রাজধানীতে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদ। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় যন্ত্রসঙ্গীতের সুরমূর্ছনা দিয়ে শুরু হবে এ উৎসব। ১০টা পর্যন্ত চলবে অনুষ্ঠান। বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত একযোগে অনুষ্ঠান চলবে চারুকলার বকুলতলা, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর এবং উত্তরার ৩নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণির উন্মুক্ত মঞ্চে।
এ উৎসবে থাকবে যন্ত্রসঙ্গীত, বসন্ত কথন পর্ব, প্রীতি বন্ধনী, আবির বিনিময়, একক আবৃত্তি, দলীয় আবৃত্তি, একক সঙ্গীত, দলীয় সঙ্গীত, দলীয় নৃত্য, শিশু-কিশোরদের বিশেষ পরিবেশনা।