চলতি বছরের শুরুর দিকে—৭ জানুয়ারি দেশে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার হিসাবে করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ৩১ জনের। এরপর প্রতিদিন মৃত্যু ছিল কম। এমনকি গত মাসের শেষ ভাগে তিন দিন পাঁচজন করে মারা যায়। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে আবারও মৃত্যুর রেখা ওপরে উঠতে শুরু করেছে এবং দুই মাস আট দিন পরে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার হিসাবে সর্বোচ্চ ২৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। একই সঙ্গে তিন মাস পরে দৈনিক শনাক্তও বেড়ে এক হাজার ৭৭৩ জনে উঠেছে। সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর শনাক্ত ছিল এক হাজার ৮৭৭ জন। মাঝের দিনগুলোতে শনাক্ত কম ছিল এবং গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক শনাক্ত ৩০০ জনেরও নিচে নেমে গিয়েছিল। দৈনিক শনাক্ত হারও যেখানে ২ শতাংশের ঘরে নেমে গিয়েছিল, তা আবার গতকাল প্রায় ১০ শতাংশের কাছে উঠে গেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সব মিলিয়ে দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি আবারও ভয় জাগিয়ে তুলছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘মানুষ যেন টিকা নিয়েই নিজেদের নিরাপদ ভাবতে শুরু করেছেন। সবাই কেমন যেন বেপরোয়া হয়ে মাস্ক ছাড়াই চলাফেরা করা শুরু করেছে। স্বাভাবিক সময়ের মতো চলাফেরা, বেড়ানো, সামাজিক অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশে ভিড় করতে শুরু করেছে; যার পরিণতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে, মৃত্যু বাড়ছে। এখনো যদি মানুষ সতর্ক না হয়, যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে, তবে সামনে কিন্তু বড় বিপদ অপেক্ষা করতে পারে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, করোনারভাইরাসের পরীক্ষাও বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার হিসাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৮ হাজার ৬৯৫ জনের, যাদের মধ্যে এক হাজার ৭৭৩ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৮ জনের। এর মধ্যে মারা গেছে আট হাজার ৫৭১ জন এবং সুস্থ হয়েছে পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ১২৭ জন। করোনা সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘মানুষ তো কিছুই মানছে না। আমরা প্রতিদিন সতর্কতার কথা বলি। গণমাধ্যমেও ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে; মানুষকে সাবধান হতে বলা হচ্ছে, সংক্রমণ যে বেড়ে যাচ্ছে, মৃত্যু যে বাড়ছে তা দেখেও মানুষের উপলব্ধি হচ্ছে না—এটা খুবই বিপদের কথা।’
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহম্মেদ বলেন, ‘এখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন, তাঁদের ইতিহাস খুঁজে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগই গত কিছুদিনের মধ্যে কক্সবাজার কিংবা অন্য কোথাও না কোথাও জনসমাগমে অসতর্কভাবে, উপযুক্তভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ভ্রমণ করেছেন।’