বেশিরভাগ মানুষই কম-বেশি মুখের দুর্গন্ধের সমস্যায় ভোগেন। প্রতিবার খাবার গ্রহণে মুখের ভিতরে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা ও জীবাণুর অবস্থান, মুখের ভিতরে ছত্রাক ও ফাঙ্গাসের কারণে মুখের দুর্গন্ধ হতে পারে। মুখের যে কোনও ধরনের ঘা বা ক্ষত, ডেন্টাল সিস্ট বা টিউমার, মুখের ক্যানসার, দুর্ঘটনার কারণে কোনও ফ্র্যাকচার ও ক্ষত। এছাড়া দেহের অন্যান্য রোগের কারণেও মুখের দুর্গন্ধ হতে পারে। যেমন- পেপটিক আলসার বা পরিপাকতন্ত্রের রোগ, কিডনি রোগ, লিভারের রোগ, গলা বা পাকস্থলীর ক্যান্সার ইত্যাদি। ফলে অন্য কারও সঙ্গে কথা বলতে গেলে মুখের দুর্গন্ধ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঘরোয়া কিছু প্রতিকারের মাধ্যমে এই সমস্যার হাত থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
প্রথমত, মুখের দুর্গন্ধের পেছনে বড় ভূমিকা মুখগহ্বরে বা পেটে জন্মানো জীবাণু হতে পারে। আরও একটি কারণ হতে পারে শরীরে জলের পরিমাণ কমে যাওয়া।
এই সমস্যা দূর করার সহজ উপায়গুলো হলো:
– খাবারের কণা দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকাটা কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এটা হয় এবং এই খাবারের জন্মানো জীবাণু পরে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। তাই দিনে অন্তত ২ বার দাঁত মাজা । এতে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী, ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু মুখে বাসা বাঁধতে পারে না।
– বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য গ্রীন টি বা যে কোনও কালো চা (ব্ল্যাক টি) খুবই উপকারী। চা মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুগুলোকে জন্মাতেই দেয় না।
– প্রতি বার দাঁত মাজার সময় জিভটাও পরিষ্কার করুন। জিভের ওপর জমা খাবারের কণা তাতে চলে যাবে।
-গাজর, আপেল জাতীয় ফল নিয়মিত খেলেও দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী জীবাণু মুখে বাসা বাঁধতে পারে না।
– ধূমপানের কারণে মুখে মারাত্মক দুর্গন্ধ হতে পারে। কারণ এতে মুখের ভিতর শুকিয়ে যায় এবং মুখের মধ্যে জন্মানো জীবাণুর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ধূমপানের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে। তাই মুখের ক্ষত বা ঘা শুকাতে সময় নেই। সেক্ষেত্রে সমস্যাটি বাড়ে।
-এসেন্সিয়াল অয়েল যুক্ত মাউথ ওয়াশ ব্যবহারে মুখের দুর্গন্ধ কমে যায়। মাউথ ওয়াশে টি ট্রি অয়েল, পিপারমেন্ট অয়েল এবং লেমন অয়েল থাকলে তা খুবই উপকার দেয় মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে।
– হজমের সমস্যার কারণও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। পেট পরিষ্কার না হলে এই সমস্যা বাড়ে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে হজমের এনজাইম খেতে পারেন। তাতে হজম ক্ষমতা বাড়বে। পেট পরিষ্কার হবে।
– মুখের ঘা বা ক্ষতের কারণে দুর্গন্ধ হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকলে এই আলসার দ্রুত সারে। কিন্তু সেটা না হলে, সমস্যাটি কমে না। সমস্যা যত দিন থাকবে, মুখের দুর্গন্ধও কমবে না।
– পানি সামান্য গরম করে, তাতে অল্প লবণ মেশান। তারপর সেই পানি কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে নিন। পানি খুব বেশ গরম করবেন না। সেক্ষেত্রে মুখের অন্য ক্ষতি হতে পারে। অল্প গরম পানিতে লবন মিশিয়ে মুখ ধুলে, মুখের ভিতরের জীবাণু বাড়তে পারে না।
– লেবুর কার্যকরী ভিটামিন উপদান মুখের মাড়ি, দাঁত ও জিভের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। একগ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে পুরো একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তারপর এই লেবুপানি দিয়ে কুলি করে নিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও লেবুপানির সাথে সামান্য এক চিমটি লবণ মিশিয়ে কুলি করে নিন। এই নিয়মটি মুখের দুর্গন্ধ তো রোধ করবেই এবং দুর্গন্ধ হওয়ার একমাত্র কারণ মুখের ভিতরে শুষ্ক হয়ে থাকার সমস্যাও রোধ করবে।
– মুখের আর্দ্র ভাব বজায় থাকলে দুর্গন্ধ কম হয়। একেবারে ঘরোয়া দাওয়াই দারুচিনি বা লবঙ্গও রাখতে পারেন মুখের মধ্যে।