সোমবার, ২০শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

অলংকার ক্রয়-বিক্রয়ে বাজুসের নতুন নির্দেশনা

প্রকাশঃ

অলংকার (সোনা, রুপা কিংবা ডায়মন্ডের) ক্রয় ও বিক্রয় সহজ করার লক্ষ্যে ‘ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নির্দেশিকা-২০২৩’ প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

বৃহস্পতিবার বাজুস কর্তৃক দেওয়া নির্দেশনায় নতুন কিংবা পুরাতন সোনা, রুপা ও ডায়মন্ড ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নির্দেশনার পাশাপাশি বাজুস সদস্যদের বেশকিছু বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

সোনার অলংকার

স্বর্ণ নীতিমালা (২০১৮) ও সংশোধিত স্বর্ণ নীতিমালা (২০২১) মোতাবেক স্বর্ণের মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হলমার্ক পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই এ বিধান মেনে হলমার্ক নিশ্চিত করে গহনা বিক্রয়, বিপণন, প্রস্তুত ও সরবরাহ করতে হবে।

নিম্নমানের গহনা প্রস্তুত, বিপণন ও বিক্রয় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদি কোনো কারিগর/ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এ ধরনের কাজে লিপ্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ক্যাডমিয়াম পাইনের নামে নিম্নমানের কোনো গহনা প্রস্তুত, বিপণন ও বিক্রি করা যাবে না। জুয়েলারি ব্যবসার সুনাম ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

পাইন ঝালার কোনো অলংকার প্রস্তুত, বিপণন ও বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সনাতন পদ্ধতির অলংকার শুধুমাত্র ক্রেতা সাধারণের নিকট থেকে ক্রয় করা যাবে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশে সোনার ৪টি মান রয়েছে, যথাক্রমে ১৮, ২১, ২২ ও ২৪ (৯৯ দশমিক ৫) ক্যারেট। এই মানের বাইরে কোনো সোনা বা সোনার অলংকার বিক্রি করা যাবে না। এখানে উল্লেখ্য, তেজাবী স্বর্ণের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতা কোনো অবস্থাতেই ৯৯.৫ এর নীচে গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে সকল হলমার্কিং কোম্পানিকে উক্ত নীতিমালা অনুযায়ী সোনা পরীক্ষা করতে হবে। সোনা বা সোনার অলংকারের গায়ে হাতে লেখা ক্যারেট সিল গ্রহণযোগ্য নয়।

সোনার অলংকার এক্সচেঞ্জ বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ও পারচেজ বা ক্রেতার নিকট থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ বাদ দিতে হবে। এছাড়া সোনার অলংকার বিক্রয়ের সময় ক্রেতা সাধারণের নিকট থেকে গ্রাম প্রতি কমপক্ষে বা ন্যূনতম ৩০০ টাকা মজুরি গ্রহণ করতে হবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাহলে কমপক্ষে বা ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

নিয়মানুযায়ী ক্রেতা সাধারণের নিকট থেকে সরকার নির্ধারিত হারে ভ্যাট সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে নিজ দায়িত্বে জমা করতে হবে। যদি কেউ এই নিয়ম অমান্য করে ভ্যাট ফাঁকি দেয় এবং ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে অভিযুক্ত হয় তাহলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা না করে বরং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

অর্ডারকৃত অলংকার প্রস্তুতের ক্ষেত্রে অথবা বুকিংকৃত অলংকার সরবরাহের ক্ষেত্রে যেদিন অর্ডার বা বুকিং দেওয়া হবে সেদিনের বাজার মূল্য কার্যকর হবে। অর্ডার সরবরাহ/গ্রহণের সময়সীমা সর্বোচ্চ এক মাস হবে। এক মাস পার হলে অর্ডারটি বাতিল বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে বায়না/অগ্রিম হিসেবে প্রদত্ত টাকা/সোনা থেকে ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে ক্রেতা সাধারণকে বাকি টাকা/সোনা ফেরত দিতে হবে।

ক্রেতা সাধারণকে আকৃষ্ট করার জন্য সোনার অলংকার বিক্রয়ের সময় কোনো প্রকার প্রলোভনমূলক উপহার প্রদান বা মূল্যছাড়/মজুরি ছাড়/ভ্যাট ছাড় দেওয়া যাবে না।

বাজুস কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম বা বেশি মূল্যে সোনা বা রুপার গহনা বিক্রি করা যাবে না। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এর ব্যত্যয় ঘটায় তাহলে আর্থিক জরিমানাসহ প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুরাতন সোনা কেনার ক্ষেত্রে

পুরাতন সোনা ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিক্রেতাকে পারচেজ রশিদ প্রদান করতে হবে। জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের পারচেজ রশিদে বিক্রেতার যাবতীয় তথ্যাদি যেমন, নাম-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে।

বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি থেকে নিজ দায়িত্বে উভয় পাশের ফটোকপি রাখতে হবে। মূল মালিক ব্যতীত কোনো প্রতিনিধির নিকট থেকে অলংকার ক্রয় করা যাবে না।

ব্যাগেজ রুলের আওতায় আনা সোনা এবং অলংকার ক্রয় সংক্রান্ত

বিক্রেতার পাসপোর্টের মূলকপি থেকে নিজ দায়িত্বে ফটোকপি করে রাখতে হবে। বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের মূলকপি থেকে নিজ দায়িত্বে উভয় পাশের ফটোকপি রাখতে হবে। প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে সোনা ক্রয় করতে হবে। এয়ারপোর্টে ডিক্লেয়ারেশন/ট্যাক্সের আওতায় থাকলে ট্যাক্স প্রদানের ডকুমেন্ট (মূল কপি) সংরক্ষণ করতে হবে।

ডায়মন্ডের অলংকার ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত

১ থেকে ৫০ সেন্টের মধ্যে সকল ডায়মন্ডের গহনার ক্ষেত্রে কালার ও ক্ল্যারিটি সর্বনিম্ন মানদণ্ড হবে (আইজে) ও (এসআই-টু)। ৫০ সেন্টের উপরে সকল ডায়মন্ডের গহনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। ডায়মন্ডের গহনায় স্বর্ণের সর্বনিম্ন মানদণ্ড ১৮ ক্যারেট। অর্থাৎ ডায়মন্ডের গহনায় ১৮ ক্যারেটের নীচের মানের স্বর্ণ ব্যবহার করা যাবে না।

ডায়মন্ডের অলংকার বিক্রয়ের সময় বাধ্যতামূলক ক্যাশমেমোতে গুণগত মান নির্দেশক 4C (Color, Clarity, Cut, Carat) উল্লেখ করতে হবে।

ডায়মন্ডের অলংকার এক্সচেঞ্জ বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ও পারচেজ বা ক্রেতার নিকট থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ বাদ দিতে হবে।

ক্রেতা আকৃষ্ট করতে প্রলোভনমূলক উপহার বা অফার প্রদান করা যাবে না। নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নকল ডায়মন্ড (মেসোনাইট, সিভিডি, ল্যাব মেইড, ল্যাব বর্ন ইত্যাদি) বিক্রি করলে ওই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডায়মন্ডের গহনার মান নিশ্চিতকরণে মানসম্পন্ন ডায়মন্ড ল্যাবের সনদ থাকতে হবে।

ডায়মন্ড অলংকার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫% ডিসকাউন্ট প্রদান করা যাবে। এ নিয়ম অমান্য করে তাহলে ৫ লাখ টাকা জরিমানাসহ বিধি মোতাবেক সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা।

রুপার অলংকার ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত

বিক্রির ক্ষেত্রে ক্যাশমেমোতে অবশ্যই ক্যারেট ও ওজন উল্লেখ থাকতে হবে। তবে মেশিন মেইড আমদানিকৃত রুপার অলংকারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী অলংকারের মান নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে।

রুপার অলংকার এক্সচেঞ্জ বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ ও পারচেজ বা ক্রেতার নিকট থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ বাদ দিতে হবে।

ভোক্তা অধিকার ও প্রতারণা রোধে রুপার অলংকারের ডিসপ্লেতে কোনো ক্রমেই ইমিটেশন/মেটাল/গোল্ড প্লেটকৃত জুয়েলারি রাখা যাবে না। ইমিটেশন/মেটাল/গোল্ড প্লেটকৃত জুয়েলারি আলাদা ডিসপ্লেতে রাখতে হবে।

কোনো জুয়েলারি ব্যবসায়ী বা বাজুস সদস্য ক্রেতার নিকট ইমিটেশন/মেটাল/গোল্ড প্লেটকৃত অলংকার রুপার অলংকার বলে বিক্রি করলে সদস্যপদ বাতিলসহ প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা।

সারাদেশে রুপার ৪টি মান নির্ধারণ করা হয়েছে, যথাক্রমে ১৮, ২১, ২২ (ক্যারেট ক্যাডমিয়াম) ও সনাতন (সনাতনে ১০ আনা জমা থাকতে হবে)। এই মানের বাইরে কোনো রুপা অলংকার বিক্রয় করা যাবে না। রুপার অলংকার বিক্রয়ের সময় ক্রেতা সাধারণের নিকট গ্রাম প্রতি ২৬ টাকা মজুরি গ্রহণ করা যাবে।

সরকারি আইন ও নির্দেশনা

সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে জুয়েলারি ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে এবং বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে।

১৯৮৭ এর আওতায় জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে ডিলিং লাইসেন্স গ্রহণ করে বৈধভাবে জুয়েলারি ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে এবং বছরের নির্দিষ্ট সময়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ডিলিং লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক ভ্যাট নিবন্ধন থাকতে হবে। তাই ভ্যাট নিবন্ধন করে নিবন্ধন সনদ (ইওঘ) প্রতিষ্ঠান বা শো-রুমের ভেতরে প্রদর্শন করতে হবে।

সরকারি নিয়মানুযায়ী, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে নামে টিআইএন সনদ থাকা ও শো-রুমের দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনও করতে হবে।

ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত ও আইনি ঝামেলা এড়াতে নিজ দায়িত্বে বিএসটিআই থেকে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ওজন পরিমাপক যন্ত্র পরীক্ষা করে স্টিকার ও সার্টিফিকেট গ্রহণ করা।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি প্রতিরোধে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে মূল্যবান ধাতু এবং মূল্যবান পাথরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আখ্যায়িত করেছে। এজন্য কোনো গ্রাহক মূল্যবান ধাতু ও পাথর ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ১০ লাখ টাকা বা তদূর্ধ্ব পরিমাণ নগদ টাকার লেনদেন করে তাহলে বিএফআইইউ বরাবর গ্রাহকের লেনদেন সম্পর্কিত রিপোর্ট প্রদান করতে হবে।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ