শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

টিকা দেওয়ার বৈষম্যের কারণে ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতি

প্রকাশঃ

টিকা গ্রহণের কারণে উন্নত দেশগুলোর করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। কিন্তু অন্য দেশগুলোর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টিকাকরণের বৈষম্যের কারণেই এ অবস্থা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ইতিমধ্যে বিশ্বের ১৮০টি দেশের ৪০০ কোটির বেশি মানুষ কমপক্ষে এক ডোজ করে টিকা পেয়েছে। আর বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ বয়স্ক মানুষ পেয়েছে ফুল ডোজের টিকা। তবে আক্ষেপের বিষয়, প্রয়োগ করা টিকার ৭৫ শতাংশই হয়েছে বিশ্বের ১০ ধনী দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্য বলছে, এসব দেশে টিকাদানের বর্তমান গতি গরিব দেশগুলোর তুলনায় অন্তত ৩০ গুণ বেশি।

টিকা দেওয়ার এ ব্যবস্থাকে ‘ভয়াবহ বৈষম্য’ বলে উল্লেখ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস ।  তিনি বলেন, ‘করোনার টিকা প্রয়োজনীয় উপাদান। কিন্তু বিশ্বে একে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়নি। নিম্ন আয়ের দেশের মানুষের মাত্র ১ শতাংশ এ টিকার একটি ডোজ পেয়েছেন।’

ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক বলেন, উচ্চ আয়ের দেশগুলোর অর্ধেক মানুষ করোনার প্রথম ডোজ পেয়েছে। অথচ কিছু ধনী দেশে এখন করোনার তৃতীয় ডোজের কথা বলা হচ্ছে। এদিকে গরিব দেশগুলোর মানুষ এখনো টিকার একটি ডোজও পায়নি। টিকা উৎপাদন ও বিতরণে এ বৈষম্য নিরসনের আহ্বান জানান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বলছে, এর পেছনে মূল কারণ করোনার টিকার সহজলভ্য না হওয়া। অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলো এরই মধ্যে গড়ে ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষকে টিকা দিয়েছে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো টিকা দিয়েছে ১১ শতাংশ মানুষকে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলো মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে।

আইএমএফ বলছে, অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোতে করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে ব্যাপক হারে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো দেশে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ সহায়তা বলবৎ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ উদীয়মান দেশে ২০২০ সালেই সহায়তা শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জনগণের কাছে তেমন একটা সহায়তাই পৌঁছায়নি।

সংস্থাটির ভাষ্য, এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। এপ্রিলের পর অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। কিন্তু উদীয়মান ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি একই মাত্রায় নিম্নগামী হওয়ায় ২০২১ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬ শতাংশই থাকছে। বিশ্ব জুড়ে মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় বলেও মনে করেন আইএমএফের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গীতা গোপীনাথ।

বিভিন্ন দেশে মহামারীর প্রথম ধাক্কার পর ধীরে ধীরে ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছে তার প্রভাবে বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক এবং রাজনীতিবিদরা মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা করছেন। তবে আইএমএফের বিশেষজ্ঞ অবশ্য মনে করছেন, মহামারী থেমে গেলে অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোতে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে অবশ্য কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে দীর্ঘদিন। একদিকে মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়বে। অনিয়মিত পণ্য সরবরাহ এবং বাড়িভাড়া বৃদ্ধিও দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে। তাই টিকার বৈষম্য দ্রুত কমিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ। বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ধাক্কা সামলানোর অবস্থায় আনতে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশে অন্তত ৪০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার আহ্বান সংস্থাটির।

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ