সোমবার, ২০শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

সবজি রপ্তানির সিংহভাগ যাচ্ছে ঘুরে ফিরে ছয়টি দেশে

প্রকাশঃ

সবজি রপ্তানির সিংহভাগ যাচ্ছে ঘুরে ফিরে ছয়টি দেশে।  বাকি দেশগুলো থেকে যে রপ্তানি আয় হচ্ছে তা হিসাবের তুলনায় খুবই নগণ্য। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সবজি রপ্তানি আয় আসা ছয়টি দেশ হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও কুয়েত। এর বাইরে ইতালি, সিঙ্গাপুর, বাহরাইন, সুইডেন, কানাডা, জার্মানির মতো অন্যান্য ৩৫টির বেশি দেশ থেকে সবজি রপ্তানির আয় আসছে মোট রপ্তানির মাত্র ২০ শতাংশ। ইপিবির সবজি রপ্তানি আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

দীর্ঘদিন ধরে বিমানের বাড়তি ভাড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকরা। সবজির বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের পণ্যগুলোর ধরন একই। তিন দেশের রপ্তানির গন্তব্যও একই। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের ভাড়া ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বেশি হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা তাদের থেকেই বেশি পণ্য কিনছেন

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছর (২০২০-২১) ১১ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের (ইউএস) সবজি বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আয় এসেছে ২ কোটি ৮৩ লাখ ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ২৪ শতাংশ। এরপর ২ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের সবজি গেছে মালয়েশিয়ায়, যা মোট রপ্তানির ২০ শতাংশ। মোট রপ্তানির ১২ শতাংশ গেছে কাতারে অর্থাৎ ১ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে গেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলারের সবজি, যা মোট রপ্তানির সাড়ে ১০ শতাংশ। পঞ্চম দেশ হিসেবে মোট আয়ের ৮ শতাংশ এসেছে সৌদি আরব থেকে। গত অর্থবছর এই দেশে ৯৩ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হয়েছে। এছাড়া কুয়েতে রপ্তানি হয়েছে ৫৮ লাখ ডলারের সবজি, যা মোট রপ্তানির ৫ শতাংশ।

শুধু গত অর্থবছর নয়, তার আগের বছরের তথ্যও বলছে একই চিত্র। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি আয় হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৬ শতাংশ আয় হয় সৌদি আরব থেকে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০ শতাংশ, আরব আমিরাত থেকে ১১ শতাংশ, মালয়েশিয়া থেকে ৮ শতাংশ ও কুয়েত থেকে ৪ শতাংশ রপ্তানি আয় আসে।

বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে সবজি রপ্তানি হলেও আয়ের সিংহভাগই কেন ছয়টি দেশে আটকে আছে— জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর বলেন, ‘নানা কারণে আমাদের রপ্তানিখাত বারবার হোঁচট খাচ্ছে। সম্ভাবনা থাকলেও আমরা নতুন নতুন বাজার ধরে রাখতে পারছি না। পরে ভারত ও পাকিস্তান সেটা দখল করে নিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাজার বড় না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ আকাশপথে পরিবহন খরচ ও বন্দরের অভাব। কিন্তু আমাদের সবজি রপ্তানির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। ওদের ভাড়ার কারণে খরচ বেশ কম। আমরা কাছাকাছি যে দেশে বিমানে সবজি পাঠায় সেখানে ভারতের বোম্বে থেকে জাহাজে সবজি রপ্তানি করে। তখন যে বাজারগুলো আমরা তৈরি করি, কম দাম দিয়ে তারা সেটা দ্রুত ধরে নেয়। কারণ তাদের খরচ কম। কম হওয়ার কারণে তারা পুষিয়ে নিতে পারে।’

উদাহরণ টেনে এই রপ্তানিকারক বলেন, ‘আমরা ওমানে সবজি রপ্তানি বেশ বাড়িয়েছিলাম। এখন সেই বাজার ধরে নিয়েছে ভারত। তারা বোম্বে থেকে সরাসরি জাহাজে তিনদিনের মধ্যে সবজি পাঠাচ্ছে। যেখানে আমাদের আকাশপথে কেজিপ্রতি খরচ ৬ ডলার; তাদের ১ ডলার। এমন অনেক দেশেই হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছি।’

যদিও রপ্তানিকারকরা বলছেন, সবজি রপ্তানির শুরু থেকে বাংলাদেশের যত সবজি সারাবিশ্বে রপ্তানি হতো, তার প্রায় অর্ধেকেরই গন্তব্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। প্রতি বছরই এসব দেশে সবজি রপ্তানি বেড়েছে। কিন্তু এখন ফ্রেড সমস্যায় চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। ফলে নজর দিতে হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে।

তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিমানের বাড়তি ভাড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকরা। সবজির বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের পণ্যগুলোর ধরন একই। তিন দেশের রপ্তানির গন্তব্যও একই। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের ভাড়া ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বেশি হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা তাদের থেকেই বেশি পণ্য কিনছেন। সম্ভাবনা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়ছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে নানা ধরনের সবজি রপ্তানি হয়। এর মধ্যে বেশি রপ্তানি হচ্ছে লাউ, কুমড়া, পটল, বেগুন, ঢেঁড়শ, আলু, পেঁপে, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, কাঁচামরিচ, বরবটি, শিম, টমেটো ও বিভিন্ন ধরনের শাক। পচনশীল বলে আলু ছাড়া এসব পরিবহন করতে হচ্ছে কার্গো বিমানে।

সারাবিশ্বে প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন প্রায় এক কোটি। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই আছেন অর্ধেকের বেশি। সেসব দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাই এসব সবজির বড় ক্রেতা। পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের প্রবাসীরাও এ দেশের সবজি খাচ্ছেন। এখন মধ্যপ্রাচ্যের ক্রেতারাও কমবেশি কিনছেন।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, কিছু তাজা সবজি সারা বছরই রপ্তানি হয়। কিছু রপ্তানি হয় বিভিন্ন মৌসুমে। মৌসুমি সবজির ক্ষেত্রে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য বিমানে প্রতিযোগিতায় পড়তে হচ্ছে কম। কিন্তু সারা বছর চাহিদা থাকে এমন সবজি জাহাজে পরিবহন করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। গভীর সমুদ্রবন্দর থাকায় ভারত বেশি সুবিধা পাচ্ছে।

তাও দেশ থেকে বেড়েছে সবজি রপ্তানি। তথ্য বলছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল চার কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। সে হিসাবে তিনগুণের বেশি সবজি রপ্তানি হচ্ছে এখন। যদিও শেষ অর্থবছর করোনার প্রভাবে রপ্তানিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ