রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

বেসরকারি খাতে ১৪.৮ শতাংশ ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতি

প্রকাশঃ

করোনা মহামারির সঙ্কট মাথায় রেখে নতুন অর্থবছরের জন্য (২০২১-২২) সম্প্রসারণ ও সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে নতুন মুদ্রানীতিতে। এবারও বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।

প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) দ্বিতীয়ার্ধে চলতি অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার আলোকে ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ঋণের মোট অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। এতে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব ও মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত নীতি সহায়তার ফলে ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ও তরল সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়লেও মহামারির প্রভাবে সামষ্টিক অর্থনীতি এখনো প্রয়োজনীয় মাত্রায় ঘুরে দাঁড়ায়নি। এ পরিস্থিতিতে সরকারের রাজস্ব বাজেটে ঈপ্সিত ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি অর্জনে আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ভঙ্গি এবং অর্থ ও ঋণ কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।

মহামারির ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে দেশীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি মানসম্মত নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করতে এই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আরও বলা হয়, বিগত দুই বছর ধরে করোনার প্রভাবে মানুষের হাতে নগদ অর্থ ধরে রাখার প্রবণতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে অর্থের আয় গতি নিম্নমুখী থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মুদ্রানীতিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাপক অর্থ সরবরাহ (এম-২) বৃদ্ধির বার্ষিক নিরাপদ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ দশমিক ০ শতাংশ।

এছাড়া মুদ্রা সরবরাহের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নিরাপদ রাখার জন্য মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ; যার মধ্যে সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক ব্যবস্থা হতে নিট ৭৬৫ বিলিয়ন টাকা বা ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি খাতের জন্য নিট ১৭৬০ বিলিয়ন টাকা বা বার্ষিক ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ বৃদ্ধির সংকুলান রাখা হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদ ও নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও ১০ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপিত হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে যে সকল বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি জোরদার, কৃষি, সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প, রফতানিমুখী শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ইতোমধ্যে গৃহীত পুনঃঅর্থায়ন স্কিম বর্ধিতকরণের পাশাপাশি অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতসমূহের (ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল ও রেস্টুরেন্টের কর্মচারী ইত্যাদি) জন্য বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করা, নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক গঠিত ৫০০ কোটি টাকার এবং তফসিলি ব্যাংকসমূহের পরিচালন মুনাফার ১ শতাংশ নিয়ে গঠিত স্টার্ট আপ ফান্ডের আকার পর্যায়ক্রমে বর্ধিত করা, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ক্লাস্টার অ্যান্ড ভ্যালু চেইন এবং নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে ব্যাংকের অর্থায়ন বৃদ্ধিকল্পে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম কার্যকরভাবে চালু করা এবং অর্থনীতিতে মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, গত অর্থবছরের মুদ্রানীতি অর্থনীতির বহিঃখাতের গতি পুনরুদ্ধার ও বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবে ঘাটতি হ্রাস এবং সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উদ্বৃত্ত লাভের পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখতে ব্যাপকভাবে সহায়ক ছিল।

গভর্নর জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ পূর্ববর্তী অর্থবছরের ৪৭২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় হ্রাস পেয়ে ৩৮০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। চলতি হিসাবে এরূপ ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও দেশে সরাসরি নিট বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহসহ আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ প্রাপ্তির ফলে সামগ্রিকভাবে আমাদের লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারে উপচিতি চাপ সৃষ্টি করে। এ চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা বাজার হতে নিট ৭৭০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্রয় করে, যা ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমানের উপচিতির প্রবণতা হ্রাস করে বহির্বিশ্বে রফতানি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখতে সাহায্য করে।

গভর্নর বলেন, মহামারি পরিস্থিতিতে সরজমিনে নিরীক্ষা কার্যক্রম অনেকটা শিথিল থাকায় প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের কিছু অপব্যবহারের বিষয়ে ইতোমধ্যে দেশের গণমাধ্যম ও বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমানে করোনার দুর্যোগময় পরিস্থিতির কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরজমিনে পরিদর্শন, নিরীক্ষা কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্থ হলেও প্রযুক্তিনির্ভর অফ-সাইট নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের টাকা যে উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে তা যেন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যাংকসমূহের নিজস্ব নজরদারি বাড়িয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ