বুধবার, ১লা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমান ফের বাড়লো

প্রকাশঃ

ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য নানা সুবিধা দিয়েও খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উল্টো খেলাপি ঋণের পরিমান ফের বাড়লো। সব মিলিয়ে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকার বেশি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছরে মোট ঋণের ৭ ৬৬ খেলাপি হলেওে এ বছরে মোট ঋণের প্রায় ৮ শতাংশ খেলাপি।

তিন মাস আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দুই হাজার ১২৩ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন না থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে মহামারি করোনা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ঋণের টাকা আদায়ে ব্যাংকগুলোর বিশেষ কোনও উদ্যোগ না থাকার কারণে খেলাপির পরিমাণ বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের শেষে প্রথমবারের মতো খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ২৭৩ কোটি ৭৮ টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

তিন মাস আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ছিল এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ছিল ৪২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। ওই সময় বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের শেষে যা ছিল ৪০ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা।

গত ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৬৪ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা।

বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এই অঙ্ক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ০২ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে মোট ৩৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন : ব্যাংকগুলোর কাছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ছয় দাবি

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালজুড়ে ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নীতি-সুবিধা দেওয়ার ফলে ওই সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও কেউ খেলাপি হননি। এখন এই বিশেষ সুবিধা বহাল না রাখলেও ঋণ পরিশোধে কিছুটা ছাড় দিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, কাগজপত্রে খেলাপি ঋণ যত দেখানো হয়, প্রকৃত চিত্র তার চেয়ে তিনগুণ বেশি। অনেক গ্রুপের ঋণ আদায় না হলেও বছরের পর বছর খেলাপি করা হয় না। আবার একই ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করে ঋণ নিয়মিত রাখা হয়। এর ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখায়।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ