শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

UCB Bank

একদিনে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ওপরে মূলধন ফিরে পেয়েছে শেয়ারবাজার

প্রকাশঃ

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে নিস্তেজ হয়ে পড়া দেশের শেয়ারবাজার আবার চাঙা হয়ে উঠেছে। প্রায় দেড় মাস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। আজ রোববার সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সব থেকে তেজি ছিল শেয়ারবাজার।

লেনদেন শুরু হতেই বড় ধরনের লাফ দেয় মূল্যসূচক। লেনদেনেও দেখা দেয় চাঙাভাব। মাত্র ১০ মিনিটে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শত কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকে লেনদেনের ।

ফলে লেনদেন ছাড়িয়ে যায় হাজার কোটি টাকা। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে প্রায় ২০০ পয়েন্ট। দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় লেনদেনে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট । এতে একদিনেই প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে ডিএসই।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যেহেতু শেয়ারবাজার পতন কাটিয়ে উঠছে তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেল (হুজগে বিক্রি) করা যাবে না। আবার গুজবে পড়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। ভালো কোম্পানি বাছাই করে বিনিয়োগকারীদের মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশিকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাতিল করে দেয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনিয়ম করার অপরাধে বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। তাই বাজারে দেখা যাচ্ছে ইতিবাচক প্রভাব ।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিএসইসি সম্প্রতি কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছু কোম্পানির আইপিও বাতিল করেছে, আবার কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনিয়মের কারণে জরিমানা করেছে। তিনি মনে করেন বিএসইসির এই পদক্ষেপ সঠিক আছে।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এতদিন বাজারে ছোট ছোট যে উত্থান হচ্ছিল তা স্বাভাবিকই ছিল। তবে আজ একদিনে ১৮০ পয়েন্ট সূচক বেড়ে যাওয়ায় তিনি বাজারকে স্বাভাবিক মনে করতে পারছেন না। এমন বড় উত্থান হলে বড় পতন হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এই উত্থানের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা উচিত।

তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজার অনেক দিন ধরেই নিম্নমুখী ছিল। বাজারের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে মূল্যসূচক আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে একদিনে মূল্যসূচক অস্বাভাবিক বাড়া ঠিক নয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে। এ আস্থা ফেরার ক্ষেত্রে বিএসইসির সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো ভূমিকা রেখেছে। বেশিকিছু কোম্পানির আইপিও বাতিল করা হয়েছে যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়াও করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হচ্ছে। এসব কিছু মিলেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, যা রোববারের লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। মূলধন বাড়ার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।

বড় অঙ্কের বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮০ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৫৪৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারির পর সূচকটির সব থেকে বড় উত্থান হলো। ওইদিন ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ২৩২ পয়েন্ট।

এদিকে প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৫৪০ পয়েন্টে উঠে এসেছে। ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সূচক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। এতে দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও অনেক কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারেননি কিছু বিনিয়োগকারী। দুই ডজনের বেশি কোম্পানি দাম বাড়ার সীমার সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি চলে যায় ।

এদিন এক শতাংশের ওপরে দাম বেড়ছে ২৭৭টি কোম্পানির। এর মধ্যে ২৫০টির দাম বেড়েছে ২ শতাংশের ওপরে। ৪ শতাংশের ওপরে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ১৫৪টি। ৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ছে ৬ শতাংশের ওপরে। ৯ শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে ২৬টির।

সূচকের বড় উত্থানের দিনে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে ডিএসইর লেনদেন। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১২৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৮৩৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৯২ কোটি ১১ লাখ টাকা।

শেয়ার করুনঃ

উপরের পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এই মাত্র প্রকাশিত

এই বিভাগের আরও সংবাদ